
ঋণ করে কেন তিনটি গরু কোরবানির পশুর হাটে বিক্রির জন্যে ঢাকা আনার সময় ট্রাক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় বাবার। লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরে দাফন শেষ করেই আবার ঢাকায় ছুটতে হয়েছে নবম শ্রেণির ছাত্র আরিফুলকে। ঋণ শোধ করতে হলে গরু বিক্রি করতেই হবে।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার নীচ পলাশী ফতেপুর গ্রামের কোহিনূর শেখ ছিলেন নিবন্ধিত জেলে। নদীভাঙনে নিঃস্ব কোহিনূর পদ্মা নদীতে মাছ ধরে, কৃষিকাজ করে সংসার চালাতেন। ১০ থেকে ১৫ বছর হলো প্রতি কোরবানির ঈদে হাটে তোলার জন্য তিন-চারটি করে গরু পালতেন। এবার তার গরু ছিল তিনটি।
প্রবাসী আত্মীয়ের কাছ থেকে ধার করে গরু কিনেছিলেন। কিন্তু ঢাকায় বছিলা হাটে পৌঁছানোর আগেই ১ জুন গভীর রাতে টাঙ্গাইলে ট্রাক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মারা যান কোহিনূর। গরুগুলো রেখে, বাবার লাশ নিয়ে রাজশাহীতে ফিরে যান ছেলে আরিফুল। পরদিনই আবার ঢাকায় ছুটতে হয় তাকে।
৪ জুন সকালে বছিলা হাটে গরুর গলায় দড়ি ধরে দাঁড়িয়ে ছিল আরিফুল। তখনো একটি গরুও বিক্রি হয়নি। ক্রেতারা চাহিদার চেয়ে অর্ধেক দাম বলছেন। অথচ তিন লাখ টাকার ওপরে ঋণ, যা শোধ করতে হলে গরু তিনটি বিক্রি করতেই হবে।
কোহিনূরের ভাগনে রেজাউল করিম বলেন, ‘লোকসানে স্থানীয়ভাবে গরু বিক্রি করা যায় না, তাই তারা কয়েকজন মিলে ঢাকায় হাটে আসতেন নগদ টাকার আশায়।’
নদীভাঙন এই পরিবারকে ধাক্কা দিয়ে দিয়েছে অস্তিত্ব সংকটে। ছয়-সাত বিঘা আবাদি জমি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে আগেই। জমি বর্গা নিয়ে সাড়ে চার বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন। এবার পেঁয়াজের দাম ছিল না। প্রায় তিন লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। সব ঋণের টাকা।তাই গরু বিক্রিই ছিল শেষ ভরসা।